নাজিম হাসান,রাজশাহী থেকে :
রাজশাহীতে কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করেই অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেপরোয়া সিন্ডিকেটে সব ধরনের চালের দাম পাইকারী কেজিতে বেড়েছে প্রায় ১০ থেকে ১২ টাকা। তবে এই দাম বাড়ার কারণ হিসেবে কোনো উত্তর মিলছে না ব্যবসায়ী, আড়তদার ও মিল মালিকদের। হঠাৎ করে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। চালের বাজার অস্থির হওয়াতে খুচরা ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এর প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের উপর। মোকামে চালের দাম বাড়ার কারণে খুচরা বাজারে প্রকার ভেদে চালের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১২ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। মনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা পর্যন্ত। মোটা চাল কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৩ টাকায়। এতে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছেন। পাইকারি চাল ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা বলছেন, মিলমালিক ও বড় বড় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাতে চালের দাম রাতারাতি বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তাছাড়া এখন মোবাইলের মাধ্যমে ঘণ্টায়-ঘণ্টায় চালের দাম পরিবর্তন করছেন তারা। মিলমালিকরা স্বল্প সুদে ব্যাংকঋণ নিয়ে বিপুল পরিমাণ মজুদ গড়ে তুলেছেন। ফলে তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বাজার। লাগামহীন দাম বাড়লেও এখন পর্যন্ত বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেই। বাগমারার তাহেরপুর এলাকার ভ্যান চালক সোনাচান ও রাজমিত্রি মাহাবুর জানান,আমরা দিন আনি, দিন খাই। প্রতিদিন এভাবে চালের দাম বৃদ্ধি হলেও আমাদের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছেনা। চালের দাম বাড়ার কারণে ছেলে-মেয়ে নিয়ে অনাহারে থাকতে হবে। সরকার ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়াতে চাইলেও বর্তমানে খুচরা বাজারে মোটা চাল ৪৮ চিকন চাল ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাবু সরদার বাড়ী রাজশাহীর তানোর সদর গুবিরপাড়া গ্রামে। কখনো কৃষি কাজ আবার কখনো ভ্যান চালিয়ে করছেন জীবিকা নির্বাহ। একদিন ভ্যান না চালালে জোটেনা তার ভাত। চারজনের সংসার একাই বহন করতে চরম হিমশিম খেতে হয়। পানি ছাড়া প্রতিটি নিত্যপন্য জিনিস কিনে খেতে হয়। আবার স্ত্রীর গর্ভে সন্তান। টাকার অভাবে নিতে পারছেন না হাসপাতালে। নিতেই হবে কোন উপায় নেই। তার স্ত্রীকে বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে নিয়ে গেছেন রামেক হাসপাতালে । ঋণ করে নিয়ে গেছেন হাসপাতালে। কারন বাচ্চা হবার সময় হয়েছে। তার ভরসা এখন এনজিও ঋণ। ভাড়া বেশি হলে পারেন চাল কিনতে, নইলে পারেন না। শুধু বাবু সরদার না চালের বাজারে অস্থিরতার কারনে শত শত বাবুর সংসার চলছে করুন অবস্থায়। ফলে চালের দাম না কমলে অনেক পরিবারকে আধা বেলা খেয়ে কোন রকমে দিন পার করতে হচ্ছে। বাবু সরদার জানান দু বেলা খাবার জোগাড় করতেই ভাড়া না পেলেও ভ্যান নিয়ে করি ছোটাছুটি। কোথাই গেলে পাব ভাড়া। সম্পদ বলতে ভ্যান। তিল পরিমান জায়গা জমি নেই। স্ত্রীর পেটে বাচ্চা । হাতে নেই টাকা কিভাবে কি করব বুঝে উঠতে পারছিনা। ১ কেজি চাল কিনতে গুনতে হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। দিনে ২ কেজি চালের প্রয়োজন হলে গুনতে হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। তিনি অভিযোগ করে বলেন সরকার মাতৃত্ব কালীন ভাতা দিলেও আমাদের মত গরীবদের ভাগ্যে জোটেনা। তার বাড়ী তানোর পৌর সদর গুবিরপাড়া গ্রামে। পুরো গ্রামটি এক সময় বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। আ”লীগের কথা বলার লোক পাওয়া যেত না । অবশ্য কালের আবর্তে এখন কেউ বিএনপি নেই প্রায় সকলেই আ”লীগ হয়ে পড়েছেন। কিন্তু বাবু সরদারের বয়স অল্প হলেও ছোট থেকেই আ”লীগ করে আসছেন । কিন্তু গরীব অসহায় হলেও নতুনদের দাপটে ভাগ্যে কিছুই জোটেনা। অথচ নতুনদের ভাগ্যে জুটছে অনেক কিছু । আরেক ভ্যান চালক মামুন জানান যে ভাবে চালের দাম বাড়তেই আছে তাতে করে সংসার পরিচালনা করাই কষ্ট সাধ্য ব্যাপার। ভাড়াও হচ্ছে না তেমন । মহা দুঃশ্চিন্তায় কাটছে দিন। আগামীতে না জানি আরো কত ভয়ানক দিন অপেক্ষা করছে। জানা গেছে গত বোরো মৌসুম থেকে বন্যার কারনে হাওড় অঞ্চলের ব্যাপক পরিমানে ফসলের ক্ষতি হয়।যার প্রভাব পড়ে চালের বাজারে । ওই সময় থেকেই হাহা করে বাড়ছে চালের দাম। হাজারো চেস্টা করে সরকার কোনভাবেই চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে সরকার চাল আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। প্রথমে ২৮ টাকা শুল্ক থাকলেও পরে কমিয়ে ২ টাকা শূল্কে চাল আমদানি করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা এমন সুযোগ দিয়েও হচ্ছেনা নিয়ন্ত্রন। মিলকল মালিক দের আমদানি করতে কম সুদে সহজ শর্তে ঋণ দেবার কথা বলা হয়। তারপরও কোন ভাবেই চালের দাম কমাতে পারছেন না সরকার। মিলার দের কাছে চরম তাকে জিম্মি হয়ে পড়েছেন খাদ্য বিভাগ। বরেন্দ্র অঞ্চল কৃষি ভান্ডার নামে খেত তানোর উপজেলা । কৃষিই প্রধান পেশা । শ্রমিকদের হাতে নেই কাজ ভ্যান চালকরা প্রয়োজন মত মারতে পারছেন না ভাড়া । সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন মধ্যসত্ত ভোগিরা । তারা না পারছেন কাজ করতে না পারছেন কোন সাহায্য নিতে । মুন্ডূমালা পৌর এলাকার শ্রমিক ইসমাইল সাফিউল জানান কৃষি কাজ আমাদের জীবিকা নির্বাহের মুল ভরসা । এখন কোন কাজ নেই । ১কেজি চাল কিনতে ৫০ টাকা লাগছে। এক বেলা জুটেতো আরেক বেলা থাকতে হচ্ছে অনাহারে। উপজেলার জনসংখ্যা মোতাবেক বছরে ৫০ হাজার মেঃটন খাবারের প্রয়োজন পড়ে। উৎপাদন হয় দ্বিগুন। তারপরও কেন অস্থির চালের বাজার এমন নানা প্রতিক্রিয়া খেটে খাওয়া জনসাধারনের। কৃষকদের রক্ত ঘামের ফসল নিয়ে ব্যাপক সিন্ডিকেট ও নিরাপদ খাদ্য আইন এবং বাজার মনিটরিং না থাকার কারনে চালের বাজারে এত অস্থিরতা বলে মনে অভিজ্ঞ মহল । তবে ইউএনও জানান মাঝেই বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। চালের সংকট সারাদেশেই। সরকার চেস্টা করছে নিয়ন্ত্রনে আনার ।#
রাজশাহীতে ব্যবসায়ীদের সেন্ডিকেটের কারনে অস্থির চালের বাজার
Sep ১৬, ২০১৭জেলা সংবাদComments Off on রাজশাহীতে ব্যবসায়ীদের সেন্ডিকেটের কারনে অস্থির চালের বাজারLike

Previous Postপ্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মানা হচ্ছে না’ বাগমারার নদী গুলোতে অবৈধ সুতি জাল দিয়ে মাছের বংশ করছে ধংস
Next Postফলোআপ রাজশাহীতে পরকিয়ায় বাধা দেয়ায় বান্ধবীর আগুনে দগ্ধ নারীর স্বামীর আত্মসমর্পণ